মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ নিহত ২

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ নিহত ২

অনলাইন ডেস্ক : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন।

নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। আজ সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে
ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে।

নিহত নারী জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা (৫৫)। নিহত রোহিঙ্গার নাম নবী হোসেন (৬৫)।
তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ৮-ই ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি হোসেনে আরার বাড়িতে ধানখেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোকে এই
দুজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে
দুপুরের খাবার দেওয়ার জন্য রান্নাঘরে যান হোসনে আরা। তখন মর্টার শেলটি এসে রান্নাঘরের ওপর পড়ে।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বলেন, দুপক্ষের গোলাগুলির সময় মর্টার শেল এসে
বিস্ফোরিত হয়েছে। তখন ঘটনাস্থলে দুজন নিহত হয়েছেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে বোমা মারার সময় গোলাটি
এসে পড়েনি বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সীমান্তের আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল রোববার রাত থেকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বর্ডার
গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ঢেঁকিবনিয়া থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। সেখানে
রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হামলা চালালে এ লড়াই
শুরু হয় বলে জানা গেছে। লড়াইয়ে উভয় পক্ষ মর্টার শেল, রকেট লঞ্চার, মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে।
এর আগে গতকাল বিজিপির আরেকটি চৌকি তুমব্রু রাইট ক্যাম্প আরাকান আর্মি দখল করে বলে জানা গেছে। ওই
চৌকি থেকে ঢেঁকিবনিয়ার দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ২৯ ও ৩১ জানুয়ারি ঘুমধুম সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ
শোনা যায়। সে সময় মর্টার শেল ও গোলার অন্তত চারটি অংশ তুমব্রু, কোনারপাড়া ও পশ্চিম ঘুমধুমে এসে পড়ে।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র বলছে, সংঘর্ষের মধ্যে গতকাল ভোরে বিজিপির ১৪ সদস্য সীমান্তের ওপার থেকে
নাইক্ষ্যংছড়িতে পালিয়ে আসেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর একই সীমান্ত দিয়ে বিজিপির আরও ৫৪ সদস্য পালিয়ে
আসেন। বিজিবি তাঁদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আহত ১৫ সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও
কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় যুদ্ধ জোরালো করেছে
আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী। তারা সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু
করেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এ সংঘাতের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *