প্রায় ৭ বছর পর দেখা হবে মা-ছেলের, কবে দেশে ফিরবেন তারা?

প্রায় ৭ বছর পর দেখা হবে মা-ছেলের, কবে ফিরবেন তারা?

প্রথমপাতা২৪ ডেস্ক : প্রায় ৭ বছর পর দেখা হবে মা-ছেলের। উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার দেশে ফেরার তারিখ নির্ধারণ হবে।

এই সফরের মধ্য দিয়ে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাড়ে সাত বছর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে।

দলীয় সূত্র বলছে, লন্ডনে পৌঁছে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কিছুদিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেরিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তিনি।

তারেক রহমান ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার আকাশ থেকে উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা পর লন্ডনে পৌঁছাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর সেখানেই দেখা হবে তারেক রহমানের সঙ্গে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যাত্রার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি রাজকীয় বহরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছেন।

সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সংবলিত এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটে করে আজ রাতে লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া। এ সফরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তারই অংশ হিসেবে রোববার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

এছাড়াও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে।

তবে তার এই সময়ে বিদেশ যাত্রা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে নানা প্রশ্ন। অনেকই প্রশ্ন রাখছেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পরও তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে চার মাস কেন সময় নিলেন?

গত ২ জানুয়ারি রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবনে দেখতে গেলে তখনই বলা হয় যে, খালেদা জিয়া দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাবেন৷
সে কারণেই সেনাপ্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সেনাপ্রধান ৪০ মিনিটের মতো সেখানে ছিলেন। তবে চিকিৎসার খোঁজ খবর নেওয়া ছাড়া আর কিছুই তখন জানানো হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে।

সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার মনে করেন, খালেদা জিয়া দেশে আবার ফিরতে পারবেন এই নিশ্চয়তাই হয়তো পেয়েছেন সেনাপ্রধানের কাছ থেকে। যার ফলে তিনি এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন।

কিন্তু আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন,
আসলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিই এখন অনিশ্চিত৷
ফলে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কী না তা এখনই মনে হয় বলা যাচ্ছে না৷ তবে চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়ার দেশে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

অন্যদিকে খালেদা জিয়া ফিরলে তারেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবেন কিনা তা নিয়ে আছে আলোচনা। কিন্তু তাতে অনেকটা পানি ঢেলে দিয়েছেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি সোমবার লণ্ডন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন,
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন।
তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আমরা এখনো সৃষ্টি করতে পারিনি।
সে জন্য অল্প কিছু সময় লাগবে। তবে সেই পরিবেশের কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

আর যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন,
আমরা এখন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।
আমাদের সব মনোযোগ সেদিকে৷ তিনি সুস্থ হওয়ার পর কবে দেশে ফিরবেন।
তারেক রহমান সাহেব তার সঙ্গে ফিরবেন কিনা এসব নিয়ে এখন আমরা ভাবছি না৷
তাকে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হবে। তারেক রহমান তাকে রিসিভ করবেন।

কাতারের আমির তামিম বিন হাম্মাদ আল থানির পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া লন্ডন যাবেন৷
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, প্রথমে তিনি লন্ডনের লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন।
এরপর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হতে পারে৷
গত বছর ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে তার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে
একটি বিশেষ পদ্ধতি (টিআইপিএস) সম্পন্ন করেছিলেন।

এই সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবেন৷ সর্বশেষ ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লণ্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি৷
সাময়িক কারামুক্তির পর তার পরিবার বার বার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন করলেও ফিরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেন রাষ্ট্রপতি।

আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে নানা অজুহাতে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার দিন রাতেই তাকে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হয়৷
তখন থেকেই তার বিদেশ যাওয়ায় আর কোনো বাধা ছিলেনা।
২ জুলাই তিনি হাসপাতাল ছেড়েছেন।

এরপর বেশ কয়েকবার তার বিদেশ যাওয়ায়ার কথা উঠলেও তিনি যাননি। ড. জাহিদ হোসেন বলেন,
মেডিকেল টিম অনুমতি না দেওয়ায় তাকে দেশের বাইরে এতদিন চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া টেরিটেবল ট্রাস্ট মামলার দণ্ড স্থগিত হয়েছে।
খালাস পেয়েছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা থেকে।
আর যেসব মামলা আছে সবগুলো মামলায় তিনি জামিনে আছেন বলে জানান বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে করা চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রয়েছে৷
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল সোমবার খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷
তারেক রহমান ২১ আগস্টের মামলা থেকেও খালাস পেয়েছেন। কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে।
তবে একুশে আগস্টসহ যেসব মামলায় তারেক রহমান খালাস পাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো টু-মাইনাস থিওরি আলোচনায় আসে৷ বিএনপি নেতারাও বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার আশ্বাস পেয়েই খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাচ্ছেন।
আর তারেক রহমানকে ফিরতে হলে সব মামলায় কমপক্ষে জামিন পেতে হবে। সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া সব মামলায় হয় খালাস পেয়েছেন, নয় জামিনে আছেন।
চিকিৎসা শেষে তার দেশে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নাই। তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন।
আর তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করছি।
তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশে আসার ব্যাপারে তিনি যথা সময়ে পদক্ষেপ নেবেন।

অন্যদিকে খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেটা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *