অনলাইন ডেস্ক : চলমান ভূরাজনৈতিক ও ভূঅর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত নিল। চীনা
মুদ্রা ইউয়ানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেনের অন্যতম প্লাটফরম রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের
(আরটিজিএস) সঙ্গে যুক্ত করল। ফলে দেশের যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংক আরটিজিএসের সঙ্গে যুক্ত ওইসব ব্যাংক
এখন সরাসরি চীনা মুদ্রা ইউয়ান দিয়ে লেনদেন করতে পারবে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লেনদেন চালু হবে। এ
ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান
নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকারসহ
অন্যান্য ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও
ভূঅর্থনৈতিক নানা বিষয়ে মতবিরোধ চলছে। এগুলো নিয়ে বিবৃতি-পালটা বিবৃতি চলছে। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ইউয়ানকে সরাসরি লেনদেন করার জন্য মুদ্রার বাস্কেটে অন্তর্ভুক্ত করল।
সূত্র জানায়, সরাসরি লেনদেন করার জন্য গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আরটিজিএসের সঙ্গে ৫টি দেশের মুদ্রাকে যুক্ত
করা হয়। এগুলো হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার, যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরোপীয় ইউনিয়নের
একক মুদ্রা ইউরো, জাপানের মুদ্রা জাপানিজ ইয়েন ও কানাডিয়ান মুদ্রা কানাডিয়ান ডলার। ওই সময় থেকে এসব
মুদ্রা দিয়ে ব্যাংকগুলো সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করতে পারত। এখন থেকে নতুন ব্যবস্থায় ওইসব মুদ্রার
পাশাপাশি ইউয়ানেও লেনদেন করতে পারবে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লেনদেন চালু হবে। এর আগেই
ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রায় ক্লিয়ারিং কার্যক্রম আধুনিক, যুগোপযোগী ও তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সব ব্যাংকের সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ক্লিয়ারিং হিসাব
রয়েছে। ওইসব হিসাবে চীনা মুদ্রা দিয়েও সরাসরি লেনদেন করা যাবে। তবে এ লেনদেনে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে
চীনা মুদ্রার প্রাপ্যতা। কারণ দেশের ব্যবসায়ীরা চীনের সঙ্গে যেসব ব্যবসা-বাণিজ্য করে সেগুলোর সবই করে
ডলারে। চীনা মুদ্রায় কেউ করে না। কারণ চীনা মুদ্রায় রপ্তানি করলে ওইগুলো অন্য দেশে ব্যবহার করার সুযোগ
কম। যে কারণে ইউয়ানে এলসি খোলার সুযোগ থাকলেও সেটি কেউ করছে না। যে কারণে চীনা মুদ্রার সংকট
রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো এখন চীন থেকে যেসব রপ্তানি আয় হবে সেগুলো চীনা মুদ্রায় গ্রহণ করে এর বিপরীতে
চীন থেকে ওইসব মুদ্রা দিয়ে আমদানি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেবে। রপ্তানিকারকদের চীনা মুদ্রার বিপরীতে চাহিদা
অনুযায়ী অন্য মুদ্রা দেওয়া হবে। তবে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি খুবই কম। আমদানি অনেক বেশি। ফলে রপ্তানি
বাবদ চীনা মুদ্রা জোগান বেশি মিলবে না।
রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে লেনেদেনর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় ওই দেশ থেকে নেওয়া রূপপুর পারমাণবিক
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে ওই ঋণ চীনা মুদ্রায় পরিশোধ করার প্রস্তাব দিয়েছে
দেশটি। এ নিয়েও বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়ার ঋণ চীনা
মুদ্রায় পরিশোধ করা সহজ হবে