টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : উঠানে চারটি লাশ চারটি খাটিয়ার মধ্যে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষন পরেই লাশ নিয়ে যাওয়া হবে কবরস্থানে। ছোট ছেলে ফাহিম (৯) কে একা রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মা, বাবা ও বড় ভাই। একই পথের যাত্রী হয়েছেন ফাহিমের খালাও।
গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ফাহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এ ঘটনা। পাশেই সামাজিক কবরস্থানে চলছে কবর খোঁড়ার কাজ।
খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন ফাহিমের আত্মিয় স্বজন ও এলাকাবাসীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে রবিন মিয়া নামে একজন গোপালপুর থেকে ফাহিমকে বাড়ি নিয়ে আসলেন। উঠানে চেয়ারে বসতে দেওয়া হল তাকে। ঘিরে ধরে কান্না করছেন স্বজনরা।
এ দিকে মা, বাবা এবং ভাইয়ের কথা ফাহিমকে জিজ্ঞেস করলে জবাবে ফাহিম বলেন, মা-বাবা আর ভাই ঢাকা গেছে। তাদের লাশ আনতে মানুষ গেছে ।
এ কথা ছাড়া ফাহিমের মুখ থেকে আর কোনো কথা হচ্ছিল না। ফাহিমের চাচি শিউলী বেগম বুকে জড়িয়ে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন সদ্য এতিম ফাহিমকে।
গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর (ঢাকা) সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ফাহিমের বাবা ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী (৪৮), মা মহসিনা সিদ্দিকী (৩৪), বড় ভাই ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৭) ও খালা সীমা খন্দকার (৩৭)।
নিহত ফারুখ তার পরিবার নিয়ে থাকতেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ভবনদত্ত গ্রামে। আর ফাহিমের খালা সীমা খন্দকারের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায়।
নিহত ফারুখ হোসেন ঘাটাইল ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
এ বিষয়ে নিহত ফারুখের ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই ও এক বোন। বোন সবার বড়।
তিনি ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
আর ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী গোপালপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসায় হোস্টেলে থেকে হেফজ পড়ছে।
ফুয়াদ হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে ডাক্তার বলেছেন থ্যালাসেমিয়া নয়।
তিনি আরো বলেন, বুধবার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি গোপালপুরে যান ফুয়াদ।
ওই রাতে হঠাৎ করে রাতে বাথরুমে গিয়ে পড়ে যায় ফুয়াদ।
পরে রাত ১১টার দিকে তাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তার মা মহসিনা সিদ্দিকা ও খালা সীমা খন্দকার।
পথে ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী।
বড় ভাই ফারুখ রাতে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কোনো কথা হয়নি আমার সাথে।
অপরদিকে, নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর আরেক চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকা জানান, ভাইয়ের সঙ্গে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ফোনে কথা হয়।
এরপর রাতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সকালে দুর্ঘটনার বিষয়টি
জানান ঢাকায় পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত নিহত সীমা খন্দকারের স্বামী।
এ ব্যাপারে ঘাটাইলের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, রাতে ফারুক সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি
আসেন। এক সঙ্গে চা পান করেছেন। তার ভাষ্য এলাকায় ফারুখ সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না।
তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।
বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে কথা হয় নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর ফুফাতো ভাই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়েছে। ফারুখসহ তার স্ত্রী
ও বড় ছেলের লাশ ঘাটাইলে তাদের সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। আর সীমা খন্দকারের লাশ তার বাড়ি গোপালপুরে
দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনার
কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জন মারা যায়।