টাঙ্গাইলে ডাকাত সর্দারসহ ২ ভাই গ্রেপ্তার, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার

টাঙ্গাইলে ডাকাত সর্দারসহ ২ ভাই গ্রেপ্তার, লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানীর ঘটনার পরিকল্পনাকারীসহ মূলহোতাসহ ডাকাত দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একইসাথে তাদের হেফাজতে থাকা লুন্ঠিত টাকা, মোবাইল সেট, গহনা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এটিএমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে চলন্ত বাসে ধর্ষণের বিষয়টি এক ভুক্তভোগী নারী গণমাধ্যমকে অবগত করলেও সে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তবে বিশেষ নারীর সাথে কথা বলেছে পুলিশের একাধিক টিম।

বিশেষ নারী বাসে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ধর্ষণের বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ বা তথ্য দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে তা দ্রুত তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।

তার দেওয়া তথ্যমতে নেত্রকোনার পূর্বধলার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে আলমগীর হোসোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকা থেকে রাজীব হোসেন (২১)কে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা সহোদর দুই ভাই। তারা মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার আমতলী গ্রামের খোরশেদ শেখের ছেলে।

পুলিশ রাজীবের হেফাজতে থাকা ১০টি মোবাইল সেট, মহিলা যাত্রিদের ৫ জোড়া চুরি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি এটিএম কার্ড, বাসের টিকেট এবং ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত দুইটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে গত শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত (২৯) মো. সবুজ (৩০) ও মো. শরিফুজ্জামান শরীফকে।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য এবং গুপ্তচরদের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী হলো আলমগীর হোসেন এবং সেকেন্ড ইন্ড কমান হলো শহিদুল ইসলাম মুহিত।

বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ইউনিক রয়েল আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বাসটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল।

বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির করে ডাকাতদল।

১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এ সময় ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। ঘটনার তিন দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী মামলা করেন।
মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে এবং মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত, মো. সবুজ এবং মো. শরীফুজ্জামান শরীফকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন,‘ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় মামলা হওয়ার পরই আমাদের টিম মাঠে কাজ শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের একটি টিম সাভারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করা হয় আলমগীর হোসেন ও রাজীব হোসেনকে।

পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের নখদর্পনে চলে এসেছে। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয়েছে। এর আগে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *