আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

প্রথমপাত২৪ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার
করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবেই তার ‘নারী’ কবিতায় সকল সৃষ্টি ও
বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে নারীর কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।

নারী জননী, নারী ভগিনী, নারী প্রেয়সী। মমতাময়ী ও করুণাময়ী নারী সকল প্রেরণার উৎস। এই নারীই আবার
সমাজে-পরিবারে এখনো নানাভাবে উপেক্ষিত, অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত।

সমাজ-সংসার-পরিবারে একজন নারীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ের ‘অবলা নারী’ একবিংশ শতাব্দীতে
এসে শুধু সংসার নয়, কর্মক্ষেত্রেও সাফল্যের সাথে তাদের বুদ্ধিমত্তা, শক্তি-সামর্থ্য ও কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে
চলেছে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে বিমান চালনা, মহাকাশের নভোচারী থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রের
সৈনিক হিসেবে সব জায়গাতেই দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলদেশে শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই নারীরা ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন
করেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।
অফিসের কাজ থেকে শুরু করে কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজও করে যাচ্ছে অনায়াসে।

প্রতি বছরের মতো আজ (৮ মার্চ) বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে পালিত
হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর প্রতি সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও সহিংসতা বন্ধ হবে এটাই হোক নারী দিবসের মূল অঙ্গীকার।

এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য: ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হবে বিনিয়োগ’।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে
বলেন, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি বলেন, নারীর উন্নয়নে
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারীসমাজ এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা করে
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘দেশের নারী-পুরুষ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার
স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এই দিবসটি উদ্‌যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৮ সালে
কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে প্রায় ১৫ হাজার নারী নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায়
আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত এই আন্দোলনের মাধ্যমেই নারী দিবসের বীজ বোপিত হয়।

জাতীয় পর্যায় থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন নারী অধিকার
কর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধারণার
প্রস্তাব দেন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় : ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার
দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮ মার্চকে
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর
থেকে পৃথিবীজুড়েই যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *