অনলাইন ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়াই দোকান নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি।
ইতিমধ্যে একতলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তে পলেস্তারার কাজ চলছে।
হাসপাতাল চত্বরে দোকান নির্মাণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও মেলেনি অনুমোদন।
এরপরও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতাল চত্বরে দোকান নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
অনুমতি দেননি। এরপরও ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমতি দিয়েছে। স্বাক্ষরও করেননি।
তবে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়
রেজল্যুশন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন লাগে না। এটা ব্যবস্থাপনা কমিটির এখতিয়ার।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাড়ে ২৬ একর জমির ওপর নির্মিত টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল
চত্বরেই শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, নার্সিং ইনস্টউটসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা আছে।
ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, শিলা আনসারী নামের এক ব্যবসায়ী হাসপাতাল চত্বরে জায়গা বরাদ্দ
চেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে একটি আবেদন করেন। তিনি সেখানে বেসরকারি ব্যাংকের (এজেন্ট ব্যাংক) একটি
শাখা, এটিএম বুথ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পণ্যের দোকান করবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।
বিষয়টি হাসপাতালের উপ-পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। কিন্তু মহাপরিচালক হাসপাতালের ভেতরে দোকান করতে জায়গা বরাদ্দের অনুমতি দেননি।
এরপরও গত ১৩ নভেম্বর এক সভায় শিলা আনসারীর নামে ৭৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেন কমিটির সদস্যরা।
বরাদ্দের ঢুক্তিপত্রে দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে নিতে বলা হয়েছে।
১২ বছর মেয়াদের চুক্তিতে মাসিক ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তিন বছর পরপর শতকরা ১০ ভাগ ভাড়া
বাড়ানোর কথা উল্লেখ আছে।
ভাড়ার শতকরা ১০ ভাগ হাসপাতাল মসজিদের উন্নয়নে, ৩০ ভাগ রোগী কল্যাণ সমিতিতে, ২০ ভাগ হাসপাতাল
কর্মচারী সমিতিতে ও ৪০ ভাগ হাসপাতালের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দোকানের জায়গা বরাদ্দ
দেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। তখন তিনি তাঁদের জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া
জায়গা বরাদ্দ দেওয়া বিধিসম্মত হবে না। এরপরও তারা বরাদ্দ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেননি।
ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য ও হাসপাতাল-সংশ্লিষ্ট অন্তত পাঁচজন অভিযোগ করেছেন, ওই জায়গা বরাদ্দ
দিতে কমিটির দেওয়া হয়েছে। এ জন্য উর্ধ্বতন পক্ষের অনুমোদন না থাকলেও তারা নিয়মবহির্ভুতভাবে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।‘
আসাদুজ্জামান বলেন, “বরাদ্দের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। দিয়েছেন এমপি ও মেয়র সাহেব।’
বৈধভাবে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে মেয়র এস এস সিরাজুল হক বলেন, সবার উপস্থিতিতে
রেজল্যুশন করা হয়েছে। বরাদ্দের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় হাসপাতালের উপপরিচালক, গণপূর্ত বিভাগের
প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উৎকোচ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “কেউ নিয়েছেন কি না, আমি জানি না।”