প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থানে কাঁপছে প্রযুক্তি বিশ্ব। জটিল কোডিং থেকে শুরু করে আর্ট,
রচনা– সব ঘরানার কনটেন্ট তৈরিতে ‘এআই’ সিস্টেম ক্রমে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। সারাবিশ্বে যা
নিয়ে বিতর্ক ও হইচই। ঘটনার পর ঘটনা ছাপিয়ে গেছে সবকিছু। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এআই দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে।
ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়েও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশেষে ইউরোপে এআই নিয়ন্ত্রণে আইনের খসড়াও
আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব
যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন দেশটিতে নির্মিত মানোন্নত সেমিকন্ডাক্টর চীনের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ২০২৩
সালে বড় বিধিনিষেধ দিয়েছে। সুপারকম্পিউটার গবেষণা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চীনের অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতেই
এমন বিধিনিষেধ। ফলে এখন চীনের কাছে উন্নত চিপ বিক্রি করতে চাইছে এমন মার্কিন প্রতিষ্ঠান বা সেখানে
ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করতে হবে বা বিশেষ লাইসেন্স পেতে হবে।
মানোন্নত মার্কিন চিপ তৃতীয় দেশ হয়ে চীনে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে চিপ নির্মাতাকে মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার
সাপেক্ষে আরও কয়েক ডজন দেশে পাঠানোর লাইসেন্স নিতে হবে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, হাইপারসনিক
ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা বা গোপন মার্কিন কোড ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে চীনের সামরিক বাহিনী এসব চিপ
ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতারা বলছে, ভূরাজনৈতিক বিধিনিষেধের ফলে রাজস্ব কমবে।
বিশেষজ্ঞের ধারণা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা চীনকে বিকল্প নতুন প্রযুক্তির দিকে ঠেলে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে থেকেই নিজস্ব চিপসেট তৈরি করছে হুয়াওয়ে। ফাইভ-জি প্রযুক্তির ‘কিরিন
৯০০০এস’ উন্মোচন করেছে নির্মাতা কোম্পানিটি। গুঞ্জন আছে, কোম্পানিটি আরও চিপসেট আনতে যাচ্ছে।
বছরের শেষভাগে নতুন চিপসেট উন্মোচন করা হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনা সব প্রতিষ্ঠান মানোন্নত চিপ পেতে অন্য দেশকে এক ধরনের ‘ব্যাকডোর’ হিসেবে ব্যবহার
করতে পারে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতিবিষয়ক প্রধান জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, চীন নিজেই
(এআই) চিপের বিকাশে কাজ করতে পারে। আগামী কয়েক দশকে ‘এআই’ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গেম চেঞ্জার হতে পারে।
চীন ২০তলাবিশিষ্ট বিশ্বের প্রথম এআইচালিত উদ্ভিদ খামার উন্মোচন করেছে। চীনের সিচুয়ান প্রদেশের চেংদুতে
অবস্থিত ওই খামারটি চায়নিজ একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের অধীনে ইনস্টিটিউট অব আরবান
এগ্রিকালচার দ্বারা পরিচালিত।
খোঁজ যখন হত্যাকারী রোবট
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস খবরে প্রকাশ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানব লক্ষ্য নির্বাচন ও আক্রমণ করতে সক্ষম এআই নিয়ন্ত্রিত
ড্রোন ও স্থাপনার বিকাশ সারাবিশ্বেই দৃশ্যমান। প্রাণঘাতী এমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রকে ‘হত্যাকারী রোবট’ হিসেবে উল্লেখ
করেছেন বিশ্লেষকরা। অস্ত্রে আইনি ও নৈতিক বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইসরায়েলের মতো
দেশগুলো তা অনুসরণ করছে না। বিগত বছরে সময়ে সময়ে, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যায়
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়। মানবিকতা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য
হুমকির বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন
সৃজনভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব টুল রীতিমতো পুরো বিশ্বকে উল্টেপাল্টে দিচ্ছে। দেশে দেশে চলছে একে
নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের নানা কৌশল। ইউরোপীয় ডেটা প্রটেকশন বোর্ড ২০২৩ সালে চ্যাটজিপিটির জন্য টাস্কফোর্স
গঠন করে। বিশ্বের বহু দেশ ২০২৩ সালে বহুমাত্রিক এআই টুল সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে।
বাহ্যিক চেহারা শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের
সব সদস্য দেশ বিশ্বের প্রথম এআই আইন প্রণয়নে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। আইনে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছে
চ্যাটজিপিটি ও সরকারের বায়োমেট্রিক নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মতো বিষয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট
সূত্রে জানা গেছে, নতুন চুক্তিটি বিশ্বের প্রথম এআই আইন হিসেবে নজির স্থাপন করেছে। এমন আইন প্রথম বাস্তবে
প্রয়োগ করা অঞ্চল হতে চায় ইইউ। ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ঐতিহাসিক! ইইউ
প্রথম অঞ্চল হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন শুধু
নিয়মের সংকলন নয়; বরং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টার্টআপ ও গবেষকদের জন্য সারাবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
দৌরাত্ম্যে নেতৃত্ব দিতে লঞ্চ প্যাড হিসেবে কাজ করবে।