মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কি মেকআপে ঢাকা যায়?

মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কি মেকআপে ঢাকা যায়?

স্বাস্থ্য ডেস্ক : মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কি মেকআপে ঢাকা যায়? ত্বক দেখে মন পড়া যায়। কেননা, ত্বকে মনের প্রতিফলন পড়ে। কথাটা হয়তো আপনি আগেও শুনেছেন।

কিছুদিন আগেই বলিউড তারকা ক্যাটরিনা কাইফ তাঁর বিউটি ব্র্যান্ড ‘কে বাই ক্যাটরিনা’র একটি অনুষ্ঠানে এসে
বলেছিলেন, বিয়ের পর তাঁকে মেকআপ নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হয়নি। কেননা, তিনি এখন অতীতের যেকোনো
সময়ের চেয়ে সুখী। আর সেটা তাঁর ত্বকে ধরা পড়ে। তাই সুন্দর দেখাতে মেকআপের কারসাজির ওপর নির্ভরতা
কমেছে।

ত্বকের ওপর ‘স্ট্রেস’–এর প্রভাব কী, তা ক্যাটরিনার বক্তব্যে স্পষ্ট।

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে কর্টিসল বৃদ্ধি পায় (বয়স বাড়ার
সঙ্গেও শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বাড়ে), আর এ কারণেই ত্বক বুড়িয়ে যায়। কেননা, অতিরিক্ত কর্টিসল
কোলাজেনকে ভেঙে ফেলে ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমায়। কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমে যায় বলে
ত্বক ভেঙে গিয়ে ত্বকে বয়সের বলিরেখা বা ছাপ পড়ে। এ ছাড়া দুশ্চিন্তা করলে ফ্রি র‍্যাডিকেল নিঃসৃত হয়। এটি
ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবারের গঠন ভেঙে ফেলে। এর ফলেও দ্রুত ত্বকে বলিরেখা পড়ে।

সৌন্দর্য সেবাকেন্দ্র পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান বলেন, ত্বকে দুশ্চিন্তার প্রভাব মেকআপ দিয়ে খানিকটা
ঢাকা গেলেও ওভারঅল লুক থেকে সেটা সরানো যায় না। কেননা, আর কোথাও না হোক, চোখে সেটার একটা
প্রতিফলন থাকবেই। অনেকে বিয়ের মেকআপে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব করেন।
আর ঠিক এ কারণেই তাঁর স্বাভাবিক সৌন্দর্য অনেক সময় পুরোপুরি প্রকাশিত হয় না।

মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা, মানসিক চাপ ও নেতিবাচক জীবনযাপনের ফলে স্বাভাবিক কোমলতা হারায় ত্বক, তৈরি
হয় কুঁচকে যাওয়া, ব্রণ, চর্মরোগ, শুষ্কতা ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা।

ভারতের ‘মাস ওয়েলনেস ক্লিনিক’-এর কসমেটিক সার্জন এবং ‘ওয়েলনেস’ বিশেষজ্ঞ ডা. গীতা গ্রিওয়াল জানান,
মানসিক চাপ শরীর ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। তা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ত্বকে তেলের উত্পাদন বাড়ায়। ত্বক মলিন
ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।

তেলভাবের ফলে হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস বেড়ে যায়। হতাশার কারণে ত্বকের ডিএনএ সিস্টেমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়! এতে ত্বক নমনীয়তা হারায়, বলিরেখা পড়ে। ফলে স্বাভাবিকতা হারায় ত্বক, দেখা দিতে পারে ব্রণ।

কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ফলে ত্বক অতিরিক্ত
সংবেদনশীল আচরণ করতে পারে। সহজেই আক্রান্ত হয়। চুলকানি, র‍্যাশসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানুষ সাধারণত মানসিক চাপে থাকলে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রবণতা বাড়ে। যেমন সময়মতো ঘুম হয় না।
নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে মন। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয় না। নিজের যত্ন নেওয়া হয় না। ত্বকের দিকেও
আলাদা করে নজর দেওয়া হয় না। ফলে ত্বক আরও বেশি করে নাজুক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে চোখের চারপাশের
সংবেদনশীল নরম অংশ আরও বেশি করে আক্রান্ত হয়। তৈরি হয় ডার্ক সার্কেল।

মানসিক চাপ চুলের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চুল পড়ে, চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও বৃদ্ধি নষ্ট হয়।

বাংলাদেশি মডেল ও অভিনয়শিল্পী নাজিফা তুষির স্বাস্থ্যকর সুন্দর ত্বকের অন্যতম রহস্য হলো, তিনি ত্বকের আলাদা
যত্নের পাশাপাশি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করেন। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করেন। প্রতিদিন ভোরের রোদ
গায়ে মাখেন। প্রকৃতি, পোষা প্রাণী আর গাছের সঙ্গে সময় কাটান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *